
ইতিহাস:সম্রাট আকবরের সময় থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু করা হয়। সম্রাট আকবরের সময় চৈত্র মাসের শেষ দিন তার রাজ্যের সকল খাজনা উসুল করা হতে।খাজনা উসুল করা শেষ হলে প্রজাদের মধ্যে আনন্দের সাথে মিষ্টান্ন বিতরন করা হতে।মিষ্টান্ন বিতরন করার পাশাপশি সম্রাট আকবর বিভিন্ন আনুষ্ঠান পালন করতেন যা বর্তমানে পহেলা বৈশাখ এই পর্যায়ে এসেছে।
১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়।তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় ১৫৫৬ সাল থেকে।বাংলা নব্বর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ এর প্রথম নাম ছিল ফসলি সন পরে বঙ্গাব্দ।
ব্রিটিশরা প্রথম বাংলা নব্বর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ পূজা,র্কীতন এর ব্যবস্হা করে নব্বর্ষ পালন করে।১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এই দিনটি তেমন পালন করা হয় নি।
বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন: বাংলা মাসের প্রথম দিন বা বাংলা নব্বর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ এই দিনে বাঙ্গালীরা খুব সকালে ঘুম থেকে নতন জামা-কাপড় পড়ে বিভিন্ন শোভাযাত্রা করে থাকে।তবে এর পূর্বে সকাল শুরু করে পান্তা ইলিশ দিয়ে।যা কিনা বাঙ্গালীর শ্রেষ্ট খাবার,কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙ্গালী।তাই এই দিনটি মাছ ভাত দিয়ে শুরু করে থাকে।
পহেলা বৈশাখ এই দিনে বাঙ্গালীরা নতুন পোশাক পড়ে বের হয়।মেয়েরা লাল শাড়ি ও ছেলেরা লাল পান্জাবি ও পায়জামা পড়ে বের হয়।এছাড়াও বাঙ্গালীর ইতিহাসকে ধরে রাখার জন্য অনেক ছেলেরা লুঙ্গিও পড়ে থাকে।
শোভাযাত্রা:১৯৮৯ সাল থেকে পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়। পহেলা বৈশাখ এই দিনে বাঙ্গালীরা খুব সকালে ঘুম থেকে নতন জামা-কাপড় পড়ে বিভিন্ন শোভাযাত্রা করে থাকে।মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষ যোগদান করে থাকে।শোভাযাত্রায় বাঘ,হতি,পোকা সহ বিভিন্ন প্রাণির মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়।
উৎসব: রমনার বটমূল সহ বিভিন্ন স্হানে নব্বর্ষ কে রঙ্গিন সাজে বরণ করা হয়।রমনার বটমূল ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মেলা হয়,মেলা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে নাচ,গান সহ আরও অনেক আনষ্ঠান করা হয়।বাঙ্গালীর একটি শ্রেষ্ঠ উৎসব হিসেবে বাঙ্গালীরা এই দিনে খাবার খওয়া,নাচ,গান, এসব আনষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করে থাকে।
হালখাতা: ব্যবসায়িরা তারা বিগত বছরের হিসাবের খাতা বাদ দিয়ে হিসাবের নতুন খাতা খেলাকে হাল খাতা বলা হয়।ব্যবসায়িরা তাদের খরিতদারদের থেকে সকল হিসাব বা দেনা পাওনা বঝো নিয়ে এই উৎসব পালন করে।
ইসলাম কী বলে: পহেলা বৈশাখকে ইসলাম পুরোপুরি ভাবে নিষিদ্ধ করে নি।তবে কিছু আলেমরা বলেন আমরা যেহেতু বাঙ্গালী জাতি তাই জাতি হিসেবে আমাদের কিছু উৎসব থাকতে পারে তবে আমাদের যে সকল উৎসব থাকবে তা আবশ্যই ইসলাম আনুযায়ী পালন করতে হবে।
বিশিষ্ট আলেমরা বলেন প্রত্যেকটা জাতির একটা নিজস্ব উৎসব থাকে।আলেমরা আরও বলেন- আমাদের নবী হযরত মুহাম্নদ (স:) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন তখন তিনি দেখেন মদিনার ইহুদিরা বছরে দুটি উৎসব পালন করছে,তখন হযরত মুহাম্নদ (স:) একজন ইহুদিকে বললেন তেমরা এই উৎসব পালন করছে কেন?তখন ইহুদি হযরত মুহাম্নদ (স:) এর প্রশ্নের জবাবে বলল আমাদের পূর্ব পূরূষেরা এই উৎসব পালন করেছে বলে আমরাও করছি।
কিছু দিন পর হযরত জিবরাঈল (আ:) এসে নবীজিকে বললেন আপনাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুটি উৎসবের কথা বলেছেন যা আপনারা পালন করতে পারবেন।হযরত জিবরাঈল (আ:) নবীজিকে বলার সাথে সাথে হযরত মুহাম্নদ (স:) এই খুশির খবর সাহাবিদের কাছে বলেছেন এবং এর পর থেকেই আমরা মুসলমানরা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা পালন করে থাকি।
বিশিষ্ট আলেমরা আরও বলেন যে উৎসবের মধ্যে হানাহানি,মারামারি,ধর্ষণ,লুটতারাজ,ফেতনা ফাসাদ ইত্যাদি থাকে সে সকল উৎসব মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ।পহেলা বৈশাখের মধ্যে মারামারি,ধর্ষণ,লুটতারাজ,ফেতনা ফাসাদ এসব কিছু থাকে তাই পহেলা বৈশাখকে ইসলাম নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
বিশিষ্ট আলেমরা আরও বলেন পহেলা বৈশাখের দিনে যে সকল মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয় তার মধ্যে বাঘ,হতি,পোকা সহ বিভিন্ন প্রাণির মূর্তি থাকে যা কিনা ইসলামে পুরোপুরি ভাবে নিষিদ্ধ। মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও পহেলা বৈশাখের দিনে যে সকল কর্মকান্ড হয় যেমন:নাচ,গান, মেয়েদের আর্ধ লুঙ্গ পোশাক এসব কিছুই ইসলাম নিষিদ্ধ করে।
আলেমরা বলেন মুসলমানদের দুটি উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা থাকতে অন্য কোনো ধরনের উৎসব পালন না করাই ভালো।
0 Comments